ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০ এর জমকালো উদ্বোধন 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:২৩, ৩ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ হাজার বছরের বর্ণিল ও বিচিত্র সংস্কৃতির অপরূপ লীলাভূমি। হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে আজও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতি আমাদের অন্যতম শক্তি যা বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বাতন্ত্রকে জানান দেয়। বাঙালি সংস্কৃতির রূপ, নির্মিত ও পরিবেশনা কৌশল আসলে মিশ্র প্রকৃতির; বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা, ভাষা ও প্রকরণের সমন্বয় ঘটে আমাদের সংস্কৃতি আজকের জায়গায় পৌঁছেছে। 

জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ দ্বিতীয়বারের মতো ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’ আয়োজন করতে যাচ্ছে। দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞ পরিচালিত হবে। ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। উৎসবে প্রতিদিন ৩টি জেলা, ৩টি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে একটি লোকনাট্য পরিবেশিত হবে। লোকনাট্য উপভোগ করতে টিকিটি বুকিংয়ের জন্য ভিজিট করুন facebook.com/shilpakalaPage

৩ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার বিকেল ৫টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
আবহাওয়া জনিত কারনে পূর্বনির্ধারিত উদ্বোধনী আয়োজন একাডেমির নন্দনমঞ্চ থেকে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে স্থানান্তর করা হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন একাডেমির সচিব মো: বদরুল আনম ভূঁইয়া।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রাককালে বড় এই আয়োজনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিল্পীদের মেলবন্ধনের চেষ্টা করা হয়েছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে মানুষের কল্যানে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের সংস্কৃতিক অঙ্গণকে আগের আবস্তায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা দরকার। সংস্কৃতিক অঙ্গনকে জাগিয়ে তোলা দরকার। মানুষের দেহের পুষ্টি খাবার, মনের পুষ্টি সংস্কৃতি। বিভিন্ন পরিবেশনার মধ্যদিয়ে নগরবাসী সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের সাথে পরিচিত হবে, মনের খুদা মিঠবে।

উদ্বোধকের বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, যতবার এই মঞ্চে দাড়াই ততবারই জাতির পিতার কথা মনে পড়ে। কারণ তিনি এই শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বছরের প্রথমেই এই উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। এরপর আমরা ৬৪টি জেলায় সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করবো। ঢাকায় সর্বশেষ উৎসব হবে। এভাবে সকল জেলা উপজেলায় সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘এতোবড় একটা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি গর্বিত। আমার প্রার্থনা থাকবে এই মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে অত্যন্ত উঁচুমানের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। জাতি গঠনের মূল ভিত্তি আমাদের সংস্কৃতি। বর্তমান প্রথিবীতে চীনের যে উত্থান, তার পটভূমি কিন্তু সাংস্কৃতিক বিপ্লব। এই বাংলার বাইরে সারা বিশ্বে আমাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে আছে। আজকের যে স্বাভাবিকতা, স্বাধীনতা আমরা ভোগ করছি এর কারণ আমরা বাঙ্গালি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমি আস্বস্ত করছি, আমার যেটুকু সাধ্য আমি সহযোগীতা করব। বাস্তবমুখি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যমুখি প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’

সভাপতির বক্তব্যে মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘এটি হবে এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব। শিক্ষায় সংস্কৃতিতে মানবিক মুল্যবোধে, রবিন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন যে সংস্কৃতির কথা বলেছন। বঙ্গবন্ধু যেই স্বপ্নটা দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশার মধ্যে রয়েছে সমবেত সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, একক সংগীত, বাউল সংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, সমবেত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা, পুতুল নাট্য, একক আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীত ও নৃত্য, নাটকের কোরিওগ্রাফি, বৃন্দ আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবেশনা, আঞ্চলিক ও জেলা ব্রান্ডিং বিষয়ক সংগীত ও নৃত্য এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী।’

যন্ত্রসংগীত শিল্পী কাজী হাবলুর পরিচালনায় ‘জয়বাংলা, বাংলার জয়’ গানটির সাথে যন্ত্রসংগীতের মধ্যদিয়ে উদ্বোধনী পরিবেশনা শুরু হয়। একাডেমির শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর প্রথমদিনে উদ্বোধনী আয়োজনের পর ময়মনসিংহ ও গোপালগঞ্জ জেলার পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। জেলার পরিবেশনা শেষে একাডেমি প্রাঙ্গনে রাত ৮টায় শুরু হয় ঝিনাইদাহ যাত্রাদলের যাত্রাপালা।

উল্লেখ্য উৎসব আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরতে ১ জানুয়ারি ২০২০ বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এসময় একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্তিত ছিলেন।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি